সরকার কেন ইচ্ছেমতো টাকা ছাপায় না? এ রকম প্রশ্ন হয়তো প্রায় আমাদের অনেকের মনেই জেগেছে। কিন্তু কজনই বা এর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছি?
আমাদের বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের এবং উন্নয়নশীল দেশ। এদেশের প্রায় অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র। সরকার চাইলেই তো পারে বস্তা বস্তা টাকা তৈরি করে এদেশের মানুষের মাঝে বিলিয়ে দিতে! তাহলে তো আর দারিদ্রতা বলতে কিছু থাকত না। প্রতিটি দেশের সরকারের টাকা ছাপানোর স্বাধীনতা থাকলেও, সব দেশের সরকার কেন ইচ্ছেমতো টাকা ছাপায় না?
টেকউইকি২৪ এর আজকের পোস্টে আমরা এই মজার ও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর জানব! তো চলুন, উত্তর খোঁজা যাক!
সরকার কেন ইচ্ছেমতো টাকা ছাপায় না?
এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে, প্রথমে জানতে হবে মুদ্রাস্ফীতি কী, কেন এবং কীভাবে হয়!
মুদ্রাস্ফীতি কাকে বলে?
সময়ের ব্যবধানে পণ্য বা সেবার মূল্য টাকার অঙ্কে বেড়ে যাওয়াকে মুদ্রাস্ফীতি বলে। সহজভাবে বলতে গেলে, এখন এক কেজি চালের দাম ৫০ টাকা, কিন্তু আগামী বছর এক কেজি চালের দাম যদি ৬০ টাকা হয়, তবে ওই দেশের অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতির হার ২০% (শতাংশ)। এই বছরে আপনি এক কেজি চাল কিনতে চাইলে, ৫০ টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। কিন্তু আগামী বছরে একই পরিমাণ চাল কিনতে ১০ টাকা বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে। এখানে টাকার মান কমে যাচ্ছে, যাকে অর্থনীতির ভাষায় মুদ্রাস্ফীতি বলা হয়ে থাকে।
⏩ আরও পড়ুন: ইউটিউব চ্যানেল খোলার নিয়ম!
মুদ্রাস্ফীতির সাথে বেশি পরিমাণ টাকা তৈরি করার কী সম্পর্ক?
হ্যাঁ, এখানেই জড়িত আছে মূল কারণ। কোনো একটি দেশের মুদ্রা ছাপানোর দায়িত্ব থাকে সে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক এই দায়িত্ব পালন করে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংক যদি ইচ্ছেমতো টাকা ছাপিয়ে তা মূলধারার অর্থনীতিতে প্রবেশ করায় তাহলে এতে এদেশের কোনো উপকার তো হবেই না; বরং হিতে বিপরীত হবে। নেমে আসবে দেশের অর্থনীতিতে ভয়ানক অবস্থা।
ধরুন, বাংলাদেশে প্রতিবছর ২০ কেজি করে চাল উৎপাদন হয়। এবং এ বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে দেশে মোট টাকার পরিমাণ ১০০ টাকা। তাহলে প্রতি কেজি চালের দাম কত? বর্তমান বছরে প্রতি কেজি চালের দাম ৫ টাকা করে। সরকার সিদ্ধান্ত নিলো আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে আরও ১০০ টাকা ছাপাবে। তো, ২০২৩ সালে এসে দেখা গেল, দেশে মোট মুদ্রার পরিমাণ ২০০ টাকা; কিন্তু সম্পদ বলতে সেই ২০ কেজি করেই চাল উৎপাদন হচ্ছে। যেহেতু দেশে অতিরিক্ত সম্পদ নেই এবং দ্বিগুণ মুদ্রা আছে, তাই বিক্রেতা পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দ্বিগুণ করে দেবে। এতে কী লাভ হলো? এক কেজি চাল কিনতে আপনাকে ৫ টাকার বদলে ১০ টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। যা ঘুরে ফিরে ওই একই অবস্থা হয়ে গেল!
তাছাড়া ভারসাম্যহীনভাবে টাকা ছাপালে সঞ্চয়ের আগ্রহ শেষ হয়ে যায়। ধরুন, একটি মোবাইলের দাম ১৮০০০ টাকা, আপনি এখন ব্যাংকে ১৫০০০ টাকা জমা রাখলে ব্যাংক আপনাকে আগামী বছর ২০০০০ টাকা দেবে; যেটা দিয়ে আপনি মোবাইলটি কিনতে চান। কিন্তু সরকার ইচ্ছেমতো টাকা ছাপানোর ফলে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে গিয়ে আগামী বছরে সেই ফোনের দাম গিয়ে দাঁড়ালো ৩০০০০ টাকা। তাহলে কি আপনি টাকা সঞ্চয় করতে চাইবেন? অবশ্যই না!
চলুন একটা মজার ঘটনা জানি- ২০০৮ সালে জিম্বাবুয়ে সরকার ইচ্ছেমতো টাকা ছাপিয়েছিল এবং তা মূলধারার অর্থনীতিতে প্রবেশ করিয়েছিল। ফলে দেশের সকল মানুষের কাছে টাকার পরিমাণ অনেক বেড়ে গিয়েছিল। এতে তখন ওই দেশে প্রতিটি পণ্যের মূল্য এত পরিমাণ বেড়ে গিয়েছিল যে, একটা রুটি কিনতে গেলে এক বস্তা টাকা নিয়ে যেতে হতো, যা সত্যিই বিরক্তিকর ও ভয়াবহ অবস্থা। তখন হাটে-বাজারে গেলে ঠেলা গাড়িতে করে টাকা নিয়ে গিয়েও একটি পরিবারের খাবার কেনা যেত না। তখন টাকা চুরি হতো না, চুরি হতো টাকা রাখার জন্য ব্যাগ, বস্তা আর ঠেলা গাড়ি। এবার বলুন তো, যদি আমাদের দেশে এমন একটা পরিস্থিতি হয় তাহলে কেমন হবে?
⏩ আরও পড়ুন: কীভাবে ফেসবুক আইডি ভেরিফাই করবেন?
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক, আশা করি সবাই মুদ্রাস্ফীতি সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন এবং সরকার কেন ইচ্ছেমতো টাকা ছাপায় না, এই প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছেন। পোস্টটা ভালো লাগলে শেয়ার করুন। এ ধরনের আরও পোস্ট পড়তে টেকউইকি২৪ এ চোখ রাখুন!