শখের বসে শুরু হওয়া ব্লগিং এখন অনেকের একমাত্র পেশা ও প্যাসিভ ইনকামের সোর্স হয়ে উঠেছে। দিন দিন অনেক মানুষ এই স্মার্ট পেশা ব্লগিংয়ের দিকে ঝুঁকছে। ব্লগিং নিয়ে এই পর্যন্ত আমরা টেকউইকিতে বেশ কিছু পোস্ট দিয়েছি। যেগুলো পড়ে থাকলে ব্লগিং কী, এই ব্যাপারে সকলের মোটামুটি ধারণা হয়ে যাওয়ার কথা। তাই, ব্লগিং কী এই ব্যাপারে আমরা এই পোস্টে বিস্তারিত লিখছি না। আমাদের টেকউইকির আজকের পোস্ট মূলত— সফল ব্লগ চালু করার ১০টি টিপস নিয়ে। নতুন অনেকেই এই ব্লগিং সেক্টরে আসছেন, কিংবা আসতে চাচ্ছেন। পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকায়, অনেকে ব্লগিং শুরু করতে পারছেন না। তাদের জন্যই আমরা আজকে, আমাদের ৩-৪ বছরের ব্লগিং জার্নির অভিজ্ঞতা থেকে কিছু টিপস শেয়ার করছি। এগুলো ফলো করলে, নতুনরা ব্লগিং সেক্টরে ভালো করতে পারবেন বলে আশা করি। তো, চলুন কথা না বাড়িয়ে— সফল ব্লগ চালু করার ১০টি টিপস; জেনে নেওয়া যাক।
সফল ব্লগ চালু করার ১০টি টিপস
নিশ সিলেক্ট করুন
ব্লগিং শুরু করার আগেই আপনাকে একটা নিশ সিলেক্ট করতে হবে মনে মনে। নিশ মানে হলো টপিক বা ক্যাটেগরি; অর্থাৎ আপনি কোন বিষয়ে ব্লগিং করতে চান কিংবা ব্লগ লিখতে চান। নিশ সিলেক্ট করার ক্ষেত্রে সাত-পাঁচ না ভেবে আপনি যে বিষয়ে খুব পারদর্শী, সেটা দিয়েই শুরু করুন। এক্ষেত্রে আপনার অ্যাকাডেমিক সাব্জেক্টও ফোকাসে রাখতে পারবেন। যেমন- আমাদের টেকউইকির নিশ হলো টেক। এর কারণ আমরা এই টেক সেক্টর খুব ভালো বুঝি, জানি, তাই এই নিশে ভালো কন্টেন্ট লেখা আমাদের দ্বারা সম্ভব হচ্ছে। একারণে আমরা এই নিশে কাজ করছি। আবার আমাদের অ্যাকাডেমিক পড়াশোনা হলো জীব-বিজ্ঞান / বায়োলজি রিলেটেড সাবজেক্টে। এ কারণে আমরা মেডিকেল-হেলথ নিশের একটা সাইড ব্লগও চালায়। এখন আমরা টেক – হেলথ নিশে কাজ করছি বলে, আপনারও এগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে, এমন না কিন্তু! আপনি ধরুন, খুবই ভ্রমণ পিপাসু, প্রচুর ভ্রমণ করে বেড়ান, তো আপনার উচিত হবে ট্রাভেল ব্লগ খুলে কাজ করা। আবার আপনার অ্যাকাডেমিক পড়াশোনা হলো— ইঞ্জিনিয়ারিং এর। তো, আপনি চাইলে ইঞ্জিনিয়ারিং এর টপিকেও ব্লগিং করতে পারেন। মোট কথা, আপনি যে বিষয়ে ভালো জানেন সেটাকে নিশ হিসেবে সিলেক্ট করুন, এতে আপনার ব্লগিং ক্যারিয়ারে দ্রুত সফলতা আসবে।
আপনার টার্গেট অডিয়েন্স সিলেক্ট করুন
নিশ সিলেক্ট করার পর আপনাকে আপনার টার্গেট অডিয়েন্স সিলেক্ট করতে হবে, তাদেরকে নিয়ে প্রপার রিসার্চ করতে হবে। আপনি আপনার ব্লগ কন্টেন্টের মাধ্যমে কীভাবে তাদের ইমপ্রেস করে আপনার ব্লগে এনগেজড রাখবেন, কীভাবে তাদের মাধ্যমে আপনার ব্লগের প্রচার বাড়াবেন, এসব কিছু আগে থেকে প্ল্যানিং করে নিতে হবে। যেমন: আপনি যদি ট্রাভেল ব্লগ শুরু করেন, তাহলে আপনার টার্গেট অডিয়েন্স হবে যারা প্রচুর ঘোরাঘুরি করে বেড়ায় তারা; আবার ইঞ্জিনিয়ারিং ব্লগ খুললে তখন আপনার টার্গেট অডিয়েন্স হবে, ইঞ্জিনিয়ারিং এর পড়ুয়া অর্থাৎ রানিং স্টুডেন্টরা না। আপনার সব সময় টার্গেট অডিয়েন্সের— পছন্দ, অপছন্দ, সেন্টিমেন্ট, ইমোশন, সাইকোলজি, ইত্যাদির ওপর পর্যাপ্ত গুরুত্ব দিতে হবে। মনে রাখবেন, অডিয়েন্সরাই ব্লগের সফলতার মূল ফ্যাক্টর।
⏩ আরও পড়ুন: ইউটিউব মনিটাইজেশন ছাড়া আয় করার কয়েকটি উপায়!
পারফেক্ট প্ল্যাটফর্ম সিলেক্ট করুন
ব্লগিং করার অনেক ধরনের প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশি ব্লগারদের সবচেয়ে পছন্দের প্ল্যাটফর্ম হলো— ওয়ার্ডপ্রেস ও ব্লগার [গুগলের]। ব্লগার গুগলের ফ্রি সেবা। তবে এখন আর সবকিছু ফ্রি ইউজ করার যুগ নেই, ব্লগারে ব্লগিং করতে চাইলে আপনাকে অন্তত একটা টপ লেভেল ডোমেইন কিনে কাজ করতে হবে। হোস্টিং ফ্রিতে পাওয়া যায় ব্লগারে। আর ওয়ার্ডপ্রেস ইউজ করতে চাইলে, আপনাকে ডোমেইন-হোস্টিং দুটোই কিনতে হবে। আমরা সব সময় ওয়ার্ডপ্রেসকেই সাজেস্ট করি। কারণ ব্লগারের বেশকিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। অন্যদিকে পৃথিবীর ম্যাক্সিমাম প্রফেশনাল ব্লগ সাইট ওয়ার্ডপ্রেসে বানানো। একদম নতুনরা, যাদের বাজেট কম, প্র্যাক্টিসের জন্য ব্লগার ইউজ করতে পারেন। অন্যথায় ওয়ার্ডপ্রেসই বেস্ট হবে। তাছাড়া বর্তমানে, বাংলাদেশি কোম্পানি থেকেই সহজে ১০০০-২০০০ ৳ খরচ করে, মোটামুটি মানের শেয়ার হোস্টিং ও ডোমেইন পাওয়া যায়। ব্লগার ও ওয়ার্ডপ্রেস নিয়ে পরবর্তীতে আমরা একটা তুলনামূলক পোস্ট দেবো, টেকউইকিতে কানেক্ট থাকলে আপনারা সেই পোস্ট থেকে আরও বিস্তারিত জানতে পারবেন।
ডোমেইন নেম পছন্দ করুন
ব্লগিং করতে তো, ব্লগ সাইট লাগবে। আর সাইট বানানোর প্রথম ধাপই হলো সাইটের জন্য একটা ডোমেইন নেম লাগবে। ডোমেইন নেম হলো সাইটের মূল ইউআরএল বা অ্যাড্রেস। যেমন— আমাদের ডোমেইন নেম হলো techwiki24.com। এখানে .com টা হলো ডোমেইনের এক্সটেনশন। .com ছাড়াও .info, .org, .net, .xyz, .tech, ইত্যাদি এরকম শত শত এক্সটেনশন রয়েছে। আপনি যেকোনোটা নিতে পারেন, আপনার নিশের সাথে মিল রেখে! তবে সারাবিশ্বে ডট কমই সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়, তাই ডট কম কেনাটাই বেটার। পারফেক্ট ডোমেইন নেম সিলেক্ট করার জন্য এই ভিডিয়োটার টিপসগুলো ফলো করতে পারেন—
আপনার ব্লগ ডিজাইন করুন
ডোমেইন – হোস্টিং বা শুধু ডোমেইন কেনার পর, ব্লগ সাইট ডিজাইন করা একটা গুরত্বপূর্ণ বিষয়। আপনার সাইটের ডিজাইন ভালো না হলে, আপনার অডিয়েন্স সাইটের কন্টেন্টে ইম্প্রেস হবে না। কথায় আছে— ‘আগে দর্শনধারী, পরে গুণবিচারী’। তো ফার্স্ট ইম্প্রেশনই ভালো না হলে তো চলবে না। এজন্য আপনাকে আপনার সাইট খুব সুন্দরভাবে, আই ক্যাচি ও ইউজার ফ্রেন্ডলিভাবে ডিজাইন করতে হবে। ব্লগার ও ওয়ার্ডপ্রেসের অনেক টেমপ্লেট রয়েছে সাইট ডিজাইন করার, আপনাকে প্ল্যাটফর্ম অনুযায়ী ভালো একটা টেমপ্লেট সিলেক্ট করে কাজ করতে হবে। যেমন— ওয়ার্ডপ্রেসের জন্য অ্যাস্ট্রা, জেনেরেটপ্রেস, নেভে, ব্লকসি, ওশানডাব্লিউপি ইত্যাদি ফ্রি থিমগুলো [টেমপ্লেট] অনেক ভালো। আমরা টেকউইকিতে ওয়াশডাব্লিউপি ইউজ করেছি। আপনারা যদি ইনভেস্ট করতে আগ্রহী হোন, তাহলে টাকা দিয়ে আরও ভালো ও আকর্ষণীয় পেইড থিম কিনতে পারেন। আর ডিজাইন শেখার জন্য ইউটিউবে সার্চ দিলেই হাজার হাজার টিউটোরিয়াল পেয়ে যাবেন।
কোয়ালিটিফুল কন্টেন্ট প্রকাশ করুন
সাইট বানানোর পর আপনার মেইন কাজ কোয়ালিটি কন্টেন্ট প্রকাশ করা। আপনার কন্টেন্টকে ইনফরমেটিভ, গুছানো, এসইও ফ্রেন্ডলি ও আকর্ষণীয় হতে হবে। ব্লগিং এ একটা প্রবাদ আছে— কন্টেন্ট ইজ কিং। তো, আপনার কন্টেন্টের মান যদি খারাপ হয়, আপনার সাইট যতই সুন্দর হোক, পাঠক কখনো আপনার কন্টেন্টে ইন্টারেস্ট দেখাবে না। ভালো কন্টেন্ট দিয়েই আপনাকে পাঠক তথা অডিয়েন্সের মনে জায়গা করে নিতে হবে। আবার শুধু কোয়ালিটিফুল কন্টেন্ট লিখে হাবিজাবিভাবে পোস্ট করে দিলেও হবে না, সেটাতে প্রপার এসইও করে, সার্চ ইঞ্জিনের জন্য অপটিমাইজ করে তারপরই প্রকাশ করতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনাদের সহযোগিতা করবে—
⏩ পড়ুন: কীভাবে এসইও ফ্রেন্ডলি আর্টিকেল লিখবেন?
আপনার ব্লগের মার্কেটিং করুন
এখন ব্লগ বানিয়ে কন্টেন্ট পাব্লিশ করেই বসে থাকলে হবে না। আপনার কন্টেন্ট যাতে অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছায়, তাই ব্লগের মার্কেটিংও করতে হবে। শুধু সার্চ ট্রাফিকের জন্য বসে থাকতে পারবেন না, কারণ একটা সাইট ভালোমতো এসইও হতে ৪-৫ মাস সময় মিনিমাম লেগে যায়। তো, এত সময় কি আপনি অডিয়েন্সহীন বসে থাকবেন? না! এর মধ্যে আপনি বিভিন্ন জায়গায় আপনার ব্লগের মার্কেটিং করুন। মেসেঞ্জারে, হোয়াটসঅ্যাপে, টেলিগ্রামে পরিচিতজনদের আপনার ব্লগ সম্পর্কে জানান। ফেসবুকসহ আপনার বিভিন্ন স্যোশাল অ্যাকাউন্টের ফ্রেন্ডস – ফলোয়ারদের কাছে আপনার ব্লগকে প্রমোট করুন। এ ছাড়াও আপনার নিশ রিলেটেড কমিউনিটি কিংবা গ্রুপগুলোতে জয়েন হয়ে সেখানেও মার্কেটিং করতে পারেন। যেমন— আপনার একটা ট্রাভেল ব্লগ আছে, তো আপনি ফেসবুকে ট্রাভেল রিলেটেড বড়ো বড়ো কমিউনিটি গ্রুপগুলোতে জয়েন হয়ে নিতে পারেন। এরপর সেখানে কেউ কোনো জায়গা সম্পর্কে কিংবা ভ্রমণ রিলেটেড কোনো তথ্য চাইলে, তাদের কাছে আপনার ব্লগ কন্টেন্ট শেয়ার করতে পারবেন। নিজে এধরনের কমিউনিটি বানাতে পারলে কিংবা ফেসবুক পেজ বড়ো করতে পারলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হওয়া যায়।
অডিয়েন্সের সাথে এনগেজড থাকুন
লয়াল অডিয়েন্স আপনার ব্লগিং জার্নি সাকসেস করার সবচেয়ে বড়ো অস্ত্র। তাই অডিয়েন্সদের গুরুত্ব দিন, তাদের সাথে এনগেজড থাকুন। এনগেজড থাকার জন্য— তাদের সকল কমেন্টের রিপ্লাই করতে পারেন, ব্লগে মেসেজের ব্যবস্থা রাখতে পারেন কিংবা আপনার স্যোশাল প্রোফাইলে তাদের মেসেজের প্রপার রিপ্লাই দিতে পারেন, কোনো বিষয়ে তাদের ভোট / মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, আপনার কোনো অর্জন তাদের সাথে সেলিব্রেট করতে পারেন; মাঝে মাঝে তাদের জন্য ছোটোখাটো গিফটের ব্যবস্থা করতে পারেন।
আপনার ব্লগকে মনিটাইজ করুন
ব্লগকে মনিটাইজ করা মানে হলো ব্লগ থেকে ইনকামের ব্যবস্থা করা। এখন আপনি টাকা খরচ করে ব্লগ বানিয়ে, অনেক কষ্ট করে কন্টেন্ট রেডি করে পোস্ট করতেই আছেন, কিন্তু টাকা / ইনকাম আসছে না; তাহলে এটা আর ক্যারিয়ার হলো না। আর্থিক স্বচ্ছলতার জন্য ব্লগ থেকে পর্যাপ্ত ইনকাম না আসলে আপনি ব্লগিংকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে পারবেন না। তাই, আপনার ব্লগকে প্রপার ওয়েতে, মাথা খাটিয়ে মনিটাইজ করতে হবে এবং অর্থ উপার্জন করতে হবে। মনিটাইজেশনের ব্যাপারে আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনাদের সহযোগিতা করবে—
⏩ পড়ুন: ব্লগ মনিটাইজ করার বিভিন্ন উপায়!
ধারাবাহিক থাকুন
ধৈর্য, অধ্যাবসায় ও ধারাবাহিকতা ব্লগিংয়ে সফল হবার মূল মন্ত্র। সফল ব্লগ চালু করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টিপস হলো এটিই— আপনাকে ধারাবাহিক হতে হবে, সফলতা আসার জন্য ধৈর্য ধরে রেগুলার পরিশ্রম করে যেতে হবে। ধারাবাহিক থাকলে এক সময় আপনি সফল হবেনই। এমনকি সফল হওয়ার পরেও, অর্থাৎ ব্লগে মনিটাইজেশন হওয়ার পরেও আপনি ধারাবাহিক না থাকলে আপনার ব্লগ ও ব্লগের ইনকাম ডাউন হয়ে যেতে পারে। তাই, কাজকে ভালোবেসে কাজ করে যেতে হবে।
**********
প্রিয় পাঠক, এই ছিল— সফল ব্লগ চালু করার সেরা ১০টি টিপস! এগুলো ছাড়াও আরও অনেক টিপস রয়েছে। আমরা এই পোস্টে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণগুলো তুলে ধরেছি। ধীরে ধীরে আরও টিপস শেয়ার করব। আজকের আর্টিকেলটি এই পর্যন্তই। আশা করি, এটি থেকে আপনারা উপকৃত হয়েছেন। তো, আর্টিকেলটা ভালো লাগলে পরিচিত বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে ফেলুন। কেউ কোনো কিছু না বুঝলে কিংবা কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন। এই ধরনের আরও নতুন নতুন পোস্ট পেতে চাইলে টেকউইকিতে চোখ রাখুন। ধন্যবাদ।