ফেসবুক আইডি হ্যাক হওয়া থেকে বাঁচাবেন কীভাবে?

ফেসবুক আইডি হ্যাক হওয়া থেকে বাঁচাবেন কীভাবে?

আমাদের দেশে ফেসবুক আইডি হ্যাক হওয়া একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা। মূলত ব্যবহারকারীদের অসতর্কতার কারণেই আইডি হ্যাক হয়ে থাকে। একটু সর্তক থাকলেই নিজের গুরুত্বপূর্ণ ডাটাসহ শখের ফেসবুক আইডিটিকে হ্যাক হওয়ার হাত থেকে বাঁচানো যায়! তো, এই পোস্টে আমরা— ‘ফেসবুক আইডি হ্যাক হওয়া থেকে বাঁচাবেন কীভাবে? — এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব! চলুন শুরু করা যাক!

ফেসবুক আইডি হ্যাক হওয়া থেকে বাঁচাবেন যেভাবে

ফেসবুক আইডি হ্যাক হওয়ার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে! আপনার আইডির সিকিউরিটিতে দুর্বলতা থাকলে সেটা হ্যাকারদের কাজকে সহজ করে দেয়! তো, প্রথমে সেসব দুর্বলতা সম্পর্কে জানা যাক!

⏩ আরও পড়ুন: হারানো মোবাইল ফোন কীভাবে খুঁজে পাবেন?

আইডিতে সাধারণত যে সকল দুর্বলতা দেখা যায়

১. লগ ইনের সময় ইমেইল অ্যাড্রেসের পরিবর্তে মোবাইল নম্বরের ব্যবহার করা।

২. টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন অন না রাখা।

৩. দুর্বল ও অনুমান করা যায় এমন পাসওয়ার্ডের ব্যবহার (যেমন মোবাইল নম্বর, ডাক নাম, সন্তানের নাম, জন্ম তারিখ, পিতা মাতার নাম ইত্যাদি)।

৪. রিকভারি অপশন চালু না রাখা।

৫. আপনার ফেসবুক আইডির নাম, জন্ম তারিখ, অরিজিনাল নাম ও জন্ম তারিখ থেকে আলাদা হওয়া।

৬. জন্ম তারিখ পাব্লিক করে রাখা।

৭. ফেসবুকের পাসওয়ার্ড ও যে ইমেইল দিয়ে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে তার পাসওয়ার্ড একই থাকা। তাহলে হ্যাকার যখন আপনার ফেসবুক হ্যাক করবে, সাথে সাথে আপনার ইমেইলও হ্যাক হয়ে যাবে।

⏩ আরও পড়ুন: Vivo Y20G কি আসলেই গেমিং ফোন?

যেভাবে সিকিউর করবেন আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট

১. মোবাইল নম্বরের পরিবর্তে ইমেইল অ্যাড্রেস ব্যবহার করুন। কেন না আপনার পাসওয়ার্ড বা ইমেইল হ্যাকার চেঞ্জ করলে সাথে সাথেই ফেসবুক আপনার ইমেইলে মেইল পাঠিয়ে আপনাকে সতর্ক করবে। সেখানে রিকভারির লিংক দেয়া থাকে। তাতে ক্লিক করে আপনি সহজেই আইডি রিকভার করতে পারবেন। তাই ফেসবুকে মোবাইল নম্বর ও ইমেইল দুটোই যুক্ত রাখুন। অবশ্য এগুলো পাব্লিক না করে হাইড করে রাখবেন।

২. ফেসবুকের সেটিংস থেকে Security and login>use two-factor authentication এ গিয়ে আপনার মোবাইল নম্বর যুক্ত করুন। এর পর অন্য কোনো মোবাইল বা কম্পিউটার থেকে আপনার আইডি তে লগইন করার চেষ্টা করুন, দেখুন পাসওয়ার্ড দেওয়ার পর কোড চায় কিনা। যদি চায় তাহলে আপনার টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন চালু হয়েছে। এখন কেউ আপনার ইমেইল ও পাসওয়ার্ড জানলেও আপনার মোবাইল হাতে না পেলে হ্যাক করতে পারবে না।

৩. অনেকের পাসওয়ার্ড থাকে শুধু মাত্র সংখা দিয়ে যা অত্যন্ত দুর্বল। পাসওয়ার্ড তৈরি করুন Capital Letter, Small Letter, Number & Symbol মিলিয়ে। ৮ ক্যারেক্টারের নিচে পাসওয়ার্ড না হওয়াই উত্তম। যেমন: [email protected]#2BV এমন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন।

৪. সেটিংস এ গেলে একটি অপশন আছে Choose 3 to 5 friends to contact if you get locked out. এখানে আপনি আপনার ৩ থেকে ৫ জন কাছের মানুষকে যোগ করুন যাদের সাথে আপনার সরাসরি / ফোনে যেকোনো সময় যোগাযোগ করতে পারবেন। যদি আপনার আইডি হ্যাক হয়ে যায় তাহলে তাদেরকে বলতে হবে facebook.com/recover এ লিংকে যেতে। তারা সেখানে আপনার আইডি রিকভার করার জন্য কোড পাবে আর সে কোড ব্যবহার করেও আপনি আপনার আইডি রিকভার করতে পারবেন। এছাড়া পার্সোনালি হ্যাকড ফেসবুক আইডি রিকভার করার লিংক হলো এটি: https://www.facebook.com/hacked

৫. বর্তমানে আইডি রিকভার করতে গেলে ফেসবুক ভিকটিমের আইডি কার্ডের ছবি চায়। কিন্তু দেখা যায় যে, আইডি কার্ডে যে নাম ও জন্ম তারিখ আছে তার সাথে ফেসবুকের নাম ও জন্ম তারিখ মেলে না। ফলে রিকভার করা সম্ভব হয় না। সুতরাং অবশ্যই আপনার আইডিতে যে নাম ও জন্ম তারিখ আছে তা ব্যবহার করুন।

৬. আপনার জন্ম তারিখ যদি পাব্লিক থাকে তাহলে আপনি এক ধরনের আক্রমণের আওতায় রয়েছেন। এক প্রকার হ্যাকার গ্রুপ রয়েছে যারা আপনার ফেসবুকের নাম ও জন্ম তারিখ মিলিয়ে মিথ্যা পরিচয় পত্র তৈরি করে আপনার আইডির কন্ট্রোল আপনার কাছ থেকে নিয়ে নেয়। সুতরাং কখনোই জন্ম তারিখ ওপেন থাকা উচিত নয়।

⏩ আরও পড়ুন: নতুন স্মার্টফোন কেনার সময় যে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখা জরুরি!

ফেসবুকে যে সকল কার্যক্রম থেকে বিরত থাকা উচিত

১. কখনোই আপনার একান্ত ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি ফেসবুকে বিশেষ করে ম্যাসেঞ্জারে কারও সাথে শেয়ার করবেন না। দেখা যায় যে অনেকেই তার আপনজনের সাথে নিজের ব্যক্তিগত ছবি শেয়ার করে। পরবর্তীতে ওই দুই জনের যেকোনো একজনের ফেসবুক হ্যাক হয়ে গেলেই হ্যাকার ওই সকল ছবি সংগ্রহ করে ব্ল্যাকমেইল করা শুরু করে।

২. অনেকে ফেসবুকে সিক্রেট এলবাম তৈরি করে তাতে তার বিভিন্ন ছবি, সার্টিফিকেট, আইডি কার্ড সংরক্ষণ করে থাকে। এটি হ্যাকারদের জন্য হীরার খনি। আপনার আইডি হ্যাক হওয়া মানে আপনার সকল ব্যক্তিগত তথ্য তার কাছে চলে গেল। এটা কখনোই করা উচিত নয়।

৩. কোনো লিংকে ক্লিক করে যদি ফেসবুকে রিডাইরেক্ট হয়ে যান ও সেখানে ফেসবুকের ইউজার আইডি / ইমেইল এবং পাসওয়ার্ড দিতে বলা হয়, তাহলে সম্ভবত আপনাকে ফিশিং করা হচ্ছে। ভুলেও সেখানে ইউজার আইডি বা ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দেবেন না। যে সাইটে গেলেন তার URL আগে খুব ভালো করে দেখে নিন। Facebook না Faecbook এ গেলেন? প্রয়োজনে অন্য একটি ট্যাবে আলাদা ভাবে নিজে ব্রাউজ করে ফেসবুকে গিয়ে লগ ইন করুন।

৪. হঠাৎ আপনার ইনবক্সে আপনার বান্ধবি মেসেজ পাঠাতে পারে যে, আমি ওমুক একটা ফেসবুক গ্রুপে গিয়ে দেখলাম যে তোর কিছু অসামাজিক / অশ্লীল ছবি আপলোড করা হয়েছে। নিচে লিংক দেওয়া আছে। ক্লিক করলে আপনার একটি ইডিটেড ছবি ও তার নিচে লগ ইন করে বাকি সব ছবি ও ভিডিয়ো দেখার জন্য বলা থাকতে পারে। এটাও এক ধরনের ফিশিং লিংক। আসলে আপনি লগইন করতে গেলে আপনার ফেসবুকের আইডি আর পাসওয়ার্ড চুরি হয়ে যাবে।

৫. মোবাইলে ফেসবুকের যে সকল কোড আসবে তা কখনোই কারও সাথে শেয়ার করবেন না।

৬. “ঘুম থেকে উঠলাম”, “ক্লাসে যাচ্ছি”, “কিছু ভাল লাগছে না” এই টাইপের স্ট্যাটাস না দেওয়া উচিত। ধরুন আপনি আপনার পুরো ফ্যামিলি নিয়ে ইদে গ্রামের বাড়ি বেড়াতে যাচ্ছেন। রেলগাড়িতে উঠে একটা স্ট্যাটাস, বাড়ি পৌঁছে আর একটা স্ট্যাটাস দিলেন। আর আপনার ফ্রেন্ড লিস্টে থাকা কোনো এক জন ব্যক্তি বুঝে গেল যে আপনার বাড়ি ফাঁকা, আর এ সুযোগে আপনার বাসার সব চুরি করে নিয়ে গেল। আপনার একটি সাদামাটা পোস্ট আপনার ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই, অনলাইনে যেকোনো পোস্ট বা কমেন্ট করার আগে চিন্তা ভাবনা করে করা উচিত।

⏩ আরও পড়ুন: কীভাবে ফেসবুক আইডি ভেরিফাই করবেন?


প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ পর্যন্ত আপনার ফেসবুক আইডি হ্যাক হওয়া থেকে বাঁচাবেন কীভাবে; সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানলেন। আমরা আপনাকে পরামর্শ দিতে পারি শুধুমাত্র! আপনার নিজের ফেসবুক আইডি সুরক্ষিত রাখা, হ্যাকিং থেকে বাঁচার জন্য সচেতন থাকা, এসবের দায়িত্ব আপনার! পোস্টের কোনো কিছু না বুঝলে কিংবা কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করতে পারেন! পোস্টটি পরিচিতজনদের সাথে শেয়ার করতে পারেন! ধন্যবাদ!

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন:

মন্তব্য করুন: