নতুন ফোন কিনতে গেলে আমরা প্রায় সবাই একটু দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায় যে কোন ফোনটা কিনব, কোন ফোনটা আমার জন্য পারফেক্ট হবে। আজ আপনাদের সাথে এমন কিছু আইডিয়া শেয়ার করব যেগুলো থেকে আপনি বেশ বুঝতে পারবেন যে আপনার কোন ফোনটা কেনা উচিত, কোন ফোনটা আপনার জন্য ভালো হবে। চলুন তাহলে জানা যাক— নতুন স্মার্টফোন কেনার সময় যে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখা জরুরি সে সম্পর্কে বিস্তারিত!
নতুন স্মার্টফোন কেনার সময় যে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন
ইউজার ইন্টারফেস
নতুন কোনো ফোন কেনার সময় অবশ্যই প্রথমে খেয়াল রাখবেন আপনি যে ফোনটা কিনতে যাচ্ছেন তার ইউজার ইন্টারফেস কেমন। অর্থাৎ ফোনটিতে অ্যাপ ওপেনিং ট্রানজিশন কেমন, কালার কম্বিনেশন কেমন ইত্যাদি। ধরুন, আপনি একটা ফোন কিনলেন, সেটার স্পেসিফিকেশন ভালো কিন্তু আপনি ব্যবহার করে আনন্দ পাচ্ছেন না। এর ইউজার ইন্টারফেস মানানসই না। তাহলে তো সেই ফোনটা কেনার কোনো মানেই হয় না, কারণ আপনি সেটা ব্যবহার করে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতে পারবেন না। তাই ফোন কেনার সময় অবশ্যই এই বিষয়টি খেয়াল রাখবেন।
⏩ আরও পড়ুন: আপনার ফোন ভালো রাখার উপায়!
ইউজারস ফিডব্যাক
ইউজারস ফিডব্যাক খুবই খুবই গুরুত্বপূর্ণ নতুন কোনো ফোন কেনার ক্ষেত্রে। আপনি ফোন কিনতে যাওয়ার আগে চেক করে নেবেন ফোনটির ব্যবহারকারীরা কী ধরনের ফিডব্যাক দিচ্ছে। তারা ফোনটি নিয়ে সন্তুষ্ট কিনা। ফেসবুকে এরকম প্রচুর গ্রুপ পেয়ে যাবেন যেখানে ইউজাররা তাদের মতামত শেয়ার করে থাকেন। আপনার কাঙ্খিত ফোনটির নাম লিখে ফেসবুকে সার্চ দিলেই অহরহ গ্রুপ এর পোস্ট পেয়ে যাবেন। সেখান থেকে তাদের মতামতের ভিত্তিতে বিবেচনা করবেন যে ফোনটি নেওয়া আপনার জন্য কতটা সঠিক সিদ্ধান্ত হবে!
প্রসেসর
যেকোনো ফোনের প্রাণ হচ্ছে সেই ফোনের প্রসেসর। আপনার ফোনের যেকোনো কাজ কেমন হবে কতটা দ্রুত হবে তা নির্ভর করে আপনার ফোনের প্রসেসর তা কীভাবে প্রসেস করতে পারছে। প্রসেসর ভালো না হলে ফোন কেনা বোকামি। বর্তমানে মিড-বাজেটের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রসেসর হচ্ছে কোয়ালকমের তৈরি স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসরগুলো। মিডিয়াটেকের চেয়ে স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসরগুলো অনেকাংশে ভালো পারফর্ম করে। তাই ফোন কেনার আগে দেখে নেবেন দাম অনুযায়ী প্রসেসর পাচ্ছেন কিনা।
ডিসপ্লে
ফোন কিনবেন আর মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করবেন না এমনটা হয় না। তাই নতুন ফোন কিনতে গেলে অবশ্যই এইচডিআর (HDR), অ্যামোলেড (Amoled) ডিসপ্লে আছে এমন ফোনগুলো কিনতে ট্রাই করবেন। রাতে ফোন ইউস করলে অ্যামোলেড ডিসপ্লে বেশ কাজে দেবে। আর যদি সুপার-অ্যামোলেড হয় তবে তো কথাই নেই। তবে ডিসপ্লে সাইজ খুব বড়ো বা খুব ছোটো নেবেন না। আপনি হাতে নিলে কমফোর্ট ফিল করেন এমন সাইজের ডিসপ্লেওয়ালা ফোন নেবেন।
⏩ আরও পড়ুন: হারানো মোবাইল ফোন কীভাবে খুঁজে পাবেন?
র্যাম
যেকোনো ফোনের র্যাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদিও আমরা ফোন কিনতে গেলে দেখি যে ফোনের র্যাম ও ইন্টার্নাল স্টোরেজ কত। কিন্তু আমরা অধিকাংশ মানুষই দেখি না যে র্যামটি কোন ধরনের। বর্তমানে সবচেয়ে লেটেস্ট র্যাম হলো ডিডিআর-৫ (DDR-5) যার স্পিড ৬৪০০ এমবিপিএস (Mbps)। ধরুন আপনি একটা ফোন কিনলেন যেটায় ব্যবহার করা হয়েছে ডিডিআর-৩ র্যাম যার স্পিড হলো ১০৬৬ এমবিপিএস (1066Mbps)। এখন সেই ফোনটিতে যদি ৬ জিবি র্যাম থাকে তাহলে তার মোট স্পিড হলো ৬*১০৬৬=৬৩৯৬ এমবিপিএস। কিন্তু অন্যদিকে যদি আপনি একটা ডিডিআর-৫ র্যামের ফোন কিনেন এবং তাতে ১জিবি র্যাম থাকে তাহলে স্পিড হবে ৬৪০০ এমবিপিএস। আশা করি এবার পার্থক্যটা বুঝতে পেরেছেন। তাই ফোন কেনার সময় দেখে নেবেন এতে কোন ধরনের র্যাম ব্যবহার করা হয়েছে।
ইন্টার্নাল স্টোরেজ
ফোনের ইন্টার্নাল স্টোরেজ মোটেও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ স্টোরেজ রিড ও রাইট স্পিড ফোনের পারফরম্যান্সে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মোবাইল স্টোরেজের সবচেয়ে লেটেস্ট ভার্সনটি হলো ইউএফএস-৩ (UFS-3)। তবে ইএমএমসি (EMMC) স্টোরেজ ও ইউএফসি স্টোরেজের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য পাবেন পারফরম্যান্সে। তাই চেষ্টা করবেন ইউএফসি-৩ এর স্টোরেজওয়ালা ফোন কিনতে।
বিল্ট-কোয়ালিটি
ফোনের বিল্ট-কোয়ালিটি খুবই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ধরুন, আপনি একটা ফোন কিনলেন কিন্তু সেটার বিল্ট মেটারিয়্যাল খুবই নিম্নমানের প্লাস্টিকের আর যদি আপনার ফোন শক্ত-পোক্ত কোথায় পড়ে যায় তাহলেই সব গেল। বিরাট মাশুল দিতে হতে পারে আপনার। তাই ফোন কেনার সময় বিল্ট-কোয়ালিটির দিকেও নজর দিবেন। চেষ্টা করবেন প্লাস্টিক বডি ফোন না নিতে, আর যদি ব্যাকগ্রাউন্ড গ্লাস বডির ফোন নেন তাহলে অবশ্য দেখে নেবেন যে প্রোটেকশন ভালো কিনা। তবে মেটালের বডি হলে ফোন কিছুটা তুলনামূলক গরম বেশি হয়। সেদিকেও খেয়াল রাখবেন।
⏩ আরও পড়ুন: Vivo Y20G কি আসলেই গেমিং ফোন?
ক্যামেরা
স্মার্টফোন কিনবেন আর ক্যামেরায় ছবি তুলবেন না, এমন মানুষ কি আসলেও পাওয়া যায়? এখন অনেক ফোনেই ৩/৪টা মেইন ক্যামেরা দেওয়া থাকে। হয়তো ভবিষ্যতে এর পরিমাণ বাড়তেও পারে, তখন হয়তো ৬টা পর্যন্তও ক্যামেরাওয়ালা ফোন পাওয়া যাবে। ফোন কিনতে গেলে দেখবেন না যে ফোনে কয়টা ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছে। এটা দেখবেন যে, ফোনে যে ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছে তার সেন্সর কেমন। ক্যামেরা ১২০ মেগাপিক্সেলের কিন্তু সেন্সর ভালো না তাহলে মোটেও সেটাকে ভালো ক্যামেরা সেটাপ বলা যাবে না। অ্যাপলের কথাই ধরা যাক, অ্যাপলের ফোনগুলো খুব বেশি মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা দেওয়া থাকে না অথচ অন্যান্য অনেক ব্র্যান্ড আছে যেগুলোতে ৪৬/১০৮ মেগাপিক্সেল পর্যন্ত ক্যামেরা রেজুলেশন দেওয়া থাকে। কিন্তু ছবি ভালো ওঠে না। তাই এদিকেও খেয়াল রাখবেন, যে সেন্সর যেন ভালো হয়।
ব্যাটারি
ফোনের ব্যাটারির ওপর নির্ভর করে ফোনটা আপনি কত সময় ধরে ব্যবহার করতে পারবেন। চেষ্টা করবেন সবসময় অন্তত ৪৫০০/৫০০০ এমএএইচ (mAh) ক্যাপাসিটির ব্যাটারিওয়ালা ফোন কিনতে। এখনকার ফোন গুলোতে বেশ বড়ো সাইজের ডিসপ্লে দেওয়া থাকে যা পাওয়ার-আপ করতে ভালো ক্যাপাসিটির ব্যাটারি থাকা প্রয়োজন।
**********
তো নতুন স্মার্টফোন কেনার সময় অবশ্যই এই ব্যাপারগুলোতে খেয়াল রাখবেন। আর পরিশেষে বলব, ফোন কিনতে গেলে তার আগে ইন্টারনেটে, ইউটিউবে ভালোভাবে রিসার্চ করে নেবেন। তাহলে আশা করি ঠকবেন না। আজকের পোস্ট এই পর্যন্তই! কেউ কোনো কিছু না বুঝলে কিংবা কারও কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করতে পারেন! ধন্যবাদ।