আগেরকার দিনে আমাদের মোবাইল ফোনে চার্জিং সিস্টেমে চিকন পিন এর চার্জারের প্রচলন ছিল। একে চিকন পিনের চার্জার বলা হতো এই জন্য যে, চার্জারের যে অংশটি ফোনের সাথে যুক্ত হবে সেই অংশটি খুবই চিকন। এই জন্য আমাদের দেশে মজা করে এখনো এই চার্জারকে চিকন পিনের চার্জার বলা হয়। এই চার্জারের ক্ষমতা খুবই কম ছিল, সর্বোচ্চ ৩/৫ ওয়াট পর্যন্ত। যেহেতু আগেকার দিনের ফোনগুলো তেমন একটা পাওয়ারফুল ছিল না, তাই তার ব্যাটারি কম শক্তিশালী হওয়ায় এই চার্জার দিয়ে অনায়াসে চার্জ দেওয়া সম্ভব হতো।
চিকন পিন থেকে টাইপ-সি পিনের চার্জার হয়ে ওঠা
পরবর্তীতে মোবাইল ফোনগুলো যখন কিছুটা শক্তিশালী হতে শুরু করল তখন দেখা মিলল কিছুটা মোটা আকারের পিনের চার্জার। আমরা সবাই একে মোটা পিনের চার্জারই বলে অভ্যস্ত, তাই এখানে এই নামটিই ব্যবহার করছি। সে সময় এই ধরনের চার্জারগুলো বেশ জনপ্রিয় ছিল, কারণ তখনো পর্যন্ত এগুলোই ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী চার্জার।
কিন্তু সমস্যা হলো অন্য জায়গায়, তখন প্রায় স্মার্টফোনের যুগ শুরু হয়ে গেছে। তাই ক্যাবল দিয়ে ফোন থেকে কম্পিউটারে বা কম্পিউটার থেকে ফোনে ডাটা আদান-প্রদানের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। যেহেতু মোটা পিনের চার্জারে যে ক্যাবল ব্যবহার করা হতো তা দিয়ে শুধু ফোন চার্জ দেওয়া যেত ডাটা ট্রান্সফার করা যেত না। তাই উদ্ভব হলো ইউএসবি টাইপ-এ পিনের চার্জার।
তখন সকল কম্পিউটারে ইউএসবি-এ এর ব্যবহার শুরু হয়ে গেছে বেশ ভালো আকারেই। তাই ডেটা ট্রান্সফার ও একই সাথে ফোন চার্জিংয়ের জন্য বাজারে আসে ইউএসবি-বি (USB-B), ইউএসবি মাইক্রো-বি (USB Micro-B)। কিন্তু এদের আকার নিয়ে মানুষের মধ্যে জন্মালো জটিলতা। এগুলোর আকার বেশ কিছুটা বড়ো, যা ফোনগুলো সাথে মানানসই হতো না। তাই উদ্ভব হলো দুইটি পিনের, মাইক্রো ইউসবি (Micro USB) ও মিনি ইউএসবি (Mini USB)। এগুলো দিয়ে একই সাথে ডেটা ট্রান্সফার ও মোবাইল ফোন চার্জ দেওয়া সম্ভব হতো। তবে মাইক্রো ইউএসবিটিই বেশি জনপ্রিয় হলো।
⏩ আরও পড়ুন: জনপ্রিয় পাঁচটি ফ্রি ভিপিএন!
এদিকে যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে ফোনগুলো আরও আধুনিক ও শক্তিশালী হচ্ছে। তাই এতে বেশি পাওয়ারের ব্যাটারির প্রয়োজন হলো, যুক্তও হলো বেশি শক্তিশালী ব্যাটারি। যেহেতু মাইক্রো ইউএসবিতে সর্বোচ্চ ১৫ ওয়াট পর্যন্ত চার্জিং ক্ষমতা ছিল তাই বড়ো ব্যাটারি দ্রুত চার্জ করার জন্য বাজারে আসলো ইউএসবি টাইপ-সি (USB Type-C)। বর্তমানে এই পিন এতই জনপ্রিয় যে আমরা ইউএসবি টাইপ-সি পিনের পোর্ট ছাড়া ফোনই কিনতেই চাই না।
ইউএসবি টাইপ-সি পিনের বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে:
- এতে যে ক্যাবল ব্যবহার করা যায় তাতে সর্বোচ্চ ১০ জিবিপিএস (10 GBps) পর্যন্ত স্পিডে ডেটা ট্রান্সফার করা যাবে।
- এই পিন যেকোনো দিক দিয়েই ব্যবহার করা যায়। এর ব্যবহারে কোনো উল্টো-সোজা ব্যাপার নেই।
- আকারে ছোটো হওয়ায় ফোনের সাথে সহজেই এঁটে যায় ও দেখতেও বেশ মানানসই।
- ইউএসবি-সি ব্যবহৃত যেকোনো পেনড্রাইভ বা পোর্টেবল হার্ডড্রাইভকে সরাসরি মোবাইল ফোনে সংযুক্ত করতে পারবেন, কোনো অ্যাডাপ্টার বা ওটিজি সমর্থিত পেনড্রাইভের দরকার নেই।
⏩ আরও পড়ুন: সেরা ৩টি ভিডিও ইডিটিং সফটওয়্যার!
বর্তমানে নতুন নতুন যেসব ফোনই বাজারে আসছে, প্রায় সবটাতেই ইউএসবি টাইপ-সি পিনের চার্জিং সিস্টেম থাকছে। তবে প্রযুক্তি বিশ্ব তো থেমে থাকে না! ভবিষ্যতে আমরা হয়তো আরও শক্তিশালী, আরও সুবিধাজনক টাইপ-ডি, টাইপ-ই… ইত্যাদি পিন দেখতে পাব! আর বর্তমানে আস্তে আস্তে যেহেতু ফিচার ফোনের ব্যবহার কমে যাচ্ছে, হয়তো আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য চিকন পিন কিংবা মোটা পিনের চার্জারগুলো জাদুঘরে থাকা বস্তু হয়ে যাবে!