আপনি কি একজন নতুন ব্লগার কিংবা আর্টিকেল রাইটার? অথবা নতুনভাবে আর্টিকেল রাইটিং শিখতে চাচ্ছেন? তাহলে আজকের এই— এসইও ফ্রেন্ডলি আর্টিকেল লেখার নিয়মগুলো অবশ্যই আপনার জন্য। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আপনাকে শেখাব— কীভাবে এসইও [SEO] ফ্রেন্ডলি আর্টিকেল লিখবেন? আশা রাখি, সম্পূর্ণ লেখাটি পড়লে অবশ্যই উপকৃত হবেন। চলুন শুরু করা যাক!
কীভাবে এসইও ফ্রেন্ডলি আর্টিকেল লিখবেন?
এসইও কী এবং এসইও ফ্রেন্ডলি কন্টেন্ট কী?
মূল টপিকে যাওয়ার আগে আমাদের জানা দরকার— এসইও কী আর এসইও ফ্রেন্ডলি কনটেন্টই বা কী? এগুলো সম্পর্কে যদি জেনে থাকেন, তবে আর্টিকেলের এই অংশটি এড়িয়ে যান আর না জেনে থাকলে জেনে নিন। এসইও (SEO – Search Engine Optimization) হলো এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে আপনি সার্চ ইঞ্জিনের সাহায্যে আপনার ওয়েবসাইটে ভিজিটর বাড়াতে পারেন বা সার্চ ইঞ্জিন থেকে আপনার ওয়েবসাইটে ভিজিটর আনতে পারেন। আর এসইও ফ্রেন্ডলি আর্টিকেল হলো— এমন এক ধরনের আর্টিকেল যেটা সার্চ ইঞ্জিনের সার্চ রেজাল্টে র্যাংক করে অর্থাৎ সার্চ রেজাল্টের প্রথম দিকে থাকে। যেমন— আপনি যখন গুগলে কোনো কিছু লিখে সার্চ করেন তখন প্রথমে যে ওয়েবসাইটের কন্টেন্টগুলো পান সেগুলো অন্যান্য কন্টেন্টের তুলনায় অনেক বেশি এসইও ফ্রেন্ডলি। যার জন্য সার্চ ইঞ্জিন সেগুলোকে প্রথম পেজে দেখায়।
⏩ আরও পড়ুন: ইউটিউব মনিটাইজেশন ছাড়া আয় করার কয়েকটি উপায়!
এসইও ও এসইও ফ্রেন্ডলি আর্টিকেল কী তা তো মোটামুটি জানলেন। কিন্তু বলুন তো— কীভাবে এসইও ফ্রেন্ডলি আর্টিকেল লিখব এবং সার্চ ইঞ্জিনে র্যাংক করাবো? এসইও অপ্টিমাইজড আর্টিকেল লেখার অনেকগুলো কার্যকরী উপায় আছে। নিচে আমরা সেগুলোর চুল-ছেঁড়া বিশ্লেষণ করে আপনাদেরকে জানাবো। নিচের পয়েন্টগুলো অবশ্যই মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
কি-ওয়ার্ড রিসার্চ
কি-ওয়ার্ড রিসার্চ হলো এমন একটি চর্চা বা অনুশীলন যার মাধ্যমে আপনি খুঁজে বের করতে পারবেন মানুষ কোন কোন কি-ওয়ার্ডগুলো লিখে বেশি সার্চ করে এবং কোন কোন কি-ওয়ার্ডগুলো সার্চ ইঞ্জিনে র্যাঙ্ক করার সম্ভাবনা বেশি। এসইও অপ্টিমাইজড আর্টিকেল লেখার জন্য আপনাকে অবশ্যই কি-ওয়ার্ড নিয়ে যথেষ্ট গবেষণা করতে হবে। এর জন্য আপনি যে বিষয়ে আর্টিকেল লিখতে চাচ্ছেন প্রথমে সে বিষয়ে গুগলে সার্চ করুন। আপনি অনেকগুলো ওয়েবলিংক দেখতে পাবেন এবং সাথে কিছু জিজ্ঞাসিত প্রশ্নও (People also ask) দেখতে পাবেন যেগুলো গুগলে মানুষ লিখে সার্চ করে। আপনি এখান থেকে প্রাপ্ত কি-ওয়ার্ডগুলো কালেক্ট করে বিভিন্ন কি-ওয়ার্ড রিসার্চার টুলের মাধ্যমে এর বিস্তারিত জানতে পারবেন। কি-ওয়ার্ড রিসার্চের জন্য কিছু জনপ্রিয় টুল হলো— Ahrefs, SemRush, MozBar, Uber Suggest, ইত্যাদি। অনেক বেশিবার সার্চ হওয়াা ও গুরুত্বপূর্ণ কি-ওয়ার্ডটি আপনার আর্টিকেলের টাইটেল হিসেবে লিখুন।
ফোকাস কি-ওয়ার্ড ও কি-ওয়ার্ড ডেনসিটি
ফোকাস কি-ওয়ার্ড হলো সেই কি-ওয়ার্ডটি যেটা আপনার আর্টিকেলের মূল কি-ওয়ার্ড। একটি আর্টিকেলে একাধিক ফোকাস কি-ওয়ার্ড থাকতে পারে। আর কি-ওয়ার্ড ডেনসিটি হলো আপনার সম্পূর্ণ আর্টিকেলে ফোকাস কি-ওয়ার্ডের ঘনত্বের পরিমাণ। এসইও ফ্রেন্ডলি আর্টিকেল লেখার জন্য ফোকাস কি-ওয়ার্ডের ঘনত্বের পরিমাণ হওয়া উচিত ১.৫-২.৫ শতাংশ। অর্থাৎ আপনার আর্টিকেলটি যদি ১০০০ ওয়ার্ডের হয় তাহলে অন্তত ১০-২৫ বার আপনার ফোকাস কি-ওয়ার্ডগুলো আর্টিকেলের বিভিন্ন স্থানে লিখুন। এতে করে আপনার লেখাটি আরও বেশি এসইও ফ্রেন্ডলি হবে। তবে খেয়াল রাখবেন, বেশি মাত্রায় কি-ওয়ার্ড ডেনসিটি না হয়। তাহলে লেখা পড়তে গেলে পাঠক বিরক্ত হতে পারে।
⏩ আরও পড়ুন: যেসব অ্যাপস কখনোই ব্যবহার করবেন না!
হেডিং ট্যাগ
পোস্টকে আরও বেশি আকর্ষণীয় ও এসইও অপ্টিমাইজড করতে আর্টিকেলের প্রয়োজনীয় স্থানে বিভিন্ন হেডিং ট্যাগ ব্যবহার করুন। ওয়ার্ডপ্রেস ও ব্লগারে যেকোনো পোস্টের টাইটেল ডিফল্ট ভাবে H1 ট্যাগ থাকে, আর্টিকেলের ভেতরে আর H1 ট্যাগ ব্যবহারের প্রয়োজন নেই! আর্টিকেলের মধ্যে H2, H3, H4, H5, H6, ইত্যাদি ট্যাগগুলো মিক্স করে ব্যবহার করুন। আর খেয়াল রাখতে হবে, আর্টিকেলের ফোকাস কি-ওয়ার্ডটা যেন কয়েকবার হেডিং ট্যাগ হিসেবে থাকে! উদাহরণ— আমাদের এই আর্টিকেলে কালার করা মূল ওয়ার্ডগুলো সবই হেডিং ট্যাগ!
ছবি এসইও ফ্রেন্ডলি করা
এসইওর ক্ষেত্রে আর্টিকেলের ফটো অনেক বেশি গুরুত্ব বহন করে। আর্টিকেল লেখার সময় প্রয়োজনীয় ছবি ব্যবহার করুন। ব্লগে ছবি সংযুক্ত করার সময় ছবিগুলোকে নেক্সট জেনারেশন ফরম্যাটে তৈরি করুন। নেক্সট জেনারেশন ফরম্যাট হলো – WEBP, JPEG 2000, JPEG XR ইত্যাদি। এবং ছবিকে রিনেম করে আর্টিকেলের টাইটেলটি লিখে দিন। এরপর ছবি সাইটে আপ্লোডের পর অল্টার টেক্সে আর্টিকেল টাইটেল দিয়ে দিন [মূলত অল্টার টেক্সটের মধ্যে আর্টিকেলের ফোকাস কি-ওয়ার্ডটা থাকতে হবে]! ছবি এসইও ফ্রেন্ডলি কীভাবে করতে হয় তা জানতে নিচের ভিডিয়োটি দেখতে পারেন—
⏩ আরও পড়ুন: গুরুত্বপূর্ণ ৭টি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস!
সুন্দর মেটা ডেস্ক্রিপশন লেখা
মেটা ডেস্ক্রিপশন কী? আমরা যখন গুগলে কোনো কিছু লিখে সার্চ করি এবং সার্চ ইঞ্জিন ফলাফল দেখায় সেখানে টাইটেলের নিচে যে সংক্ষিপ্ত লেখা দেখতে পাওয়া যায় সেটাই হলো মেটা ডেস্ক্রিপশন। মেটা ডেস্ক্রিপশনে আর্টিকেল সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখতে হয় যেখানে আপনার আর্টিকেলের একটি ধারণা দেওয়া থাকবে। মেটা ডেস্ক্রিপশন সংক্ষিপ্ত হওয়া চাই। আর এমনভাবে লিখবেন যেন তা অবশ্যই আকর্ষণীয় হয়। আরেকটা বিষয়, মেটা ডেস্ক্রিপশনের মধ্যে অন্তত একবার আর্টিকেলের ফোকাস কি-ওয়ার্ডটি থাকা লাগবে!
এসইও অপ্টিমাইজড লিংক তৈরি করা
যেকোনো আর্টিকেলকে সার্চ ইঞ্জিনে র্যাংক করানোর জন্য এসইও ফ্রেন্ডলি লিংক লেখার বিকল্প নেই। লিংক তৈরি সময় সবগুলো অক্ষর স্মল লেটারে দেবেন এবং মাঝখানে হাইফেন ব্যবহার করবেন [ইংরেজি]। বাংলায় ইউআরএল না বানানোই ভালো। যতটা সম্ভব আর্টিকেলের ইউআরএল সংক্ষেপ রাখবেন। গুগল সবসময় ছোটো ইউআরএলকে বেশি প্রায়োরিটি দিয়ে থাকে। আর ইউআরএল / পার্মালিংকের মধ্যে ফোকাস কি-ওয়ার্ডটা রাখার চেষ্টা করবেন!
ইন্টার্নাল লিংক তৈরি
ইন্টার্নাল লিংক হলো আপনার ওয়েবসাইটের বিভিন্ন পেজ ও পোস্টের লিংক আর্টিকেলে যুক্ত করা। আপনি যে বিষয়ে আর্টিকেল লিখছেন তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ আরও কয়েকটিকে আর্টিকেল আপনার পোস্টে সংযুক্ত করে দিন। এতে করে ভিজিটর আপনার সাইটে দীর্ঘক্ষণ ধরে অবস্থান করবে। যা এসইওতে খুবই কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এই পোস্টে আমরা ‘আরও পড়ুন’ লিখে যেসব পোস্টের লিংক দিয়েছি সবই ইন্টার্নাল লিংক। এছাড়াও পোস্টে কয়েকটা এক্সটার্নাল বা আউটবাউন্ড [অর্থাৎ অন্য সাইটের লিংক] লিংক থাকা ভালো! আউটবাউন্ড লিংক দেওয়ার ক্ষেত্রে— উইকি, পপুলার নিউজ পোর্টাল কিংবা অন্যান্য বড়ো বড়ো হাই অথোরিটি সাইটকে লিংক করার চেষ্টা করবেন!
⏩ আরও পড়ুন: ইসলামী ব্যাংক অনলাইন ব্যাংকিং রেজিস্ট্রেশন!
প্রিয় পাঠক, এই ছিল— কীভাবে এসইও ফ্রেন্ডলি আর্টিকেল লিখবেন; সে সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা। এর বাইরেও কিছু বিষয় রয়েছে, সেগুলো নিয়ে আমরা হয়তো অন্য একদিন লিখব। আজকের আর্টিকেলটি এই পর্যন্তই। আশা করি, এটা থেকে আপনারা কিছুটা হলেও উপকৃত হয়েছেন। তো, আর্টিকেলটা ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। কেউ কোনো কিছু না বুঝলে কিংবা কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন। এই ধরনের আরও নতুন নতুন পোস্ট পেতে টেকউইকিতে চোখ রাখুন। ধন্যবাদ।