অনলাইনে টি-শার্ট ব্যবসা শুরু করবেন কীভাবে?

অনলাইনে টি-শার্ট ব্যবসা শুরু করবেন কীভাবে?

প্রিয় পাঠক, আয়-উপার্জন বিষয়ক নতুন একটি ব্লগ পোস্টে সবাইকে স্বাগত। আজকের এই ব্লগ পোস্টে আমরা আলোচনা করব— টি-শার্ট ব্যবসা করতে কী কী লাগে এবং অনলাইনে টি-শার্ট ব্যবসা শুরু করবেন কীভাবে; এসব বিষয়ে! আশা করি ব্লগ পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়বেন এবং উপকৃত হবেন। তো, চলুন মূল আলোচনা শুরু করা যাক।

অনলাইনে টি-শার্ট ব্যবসা শুরু করবেন যেভাবে

টি-শার্ট মূলত বর্তমান প্রজন্মের তরুণ-তরুণীদের পোষাক। শুধু যে এটা তরুণ-তরুণীরাই ব্যবহার করে ব্যাপারটা এমনও না, তবে এদের সংখ্যাই বেশি। তো এই ব্যবসায় আপনার মূল ক্রেতা থাকবে তরুণ প্রজন্ম।

টি-শার্ট ব্যবসা শুরু করতে কত টাকা মূলধন লাগে?

যেকোনো ব্যবসা শুরু করতে গেলে প্রথমেই মাথায় যে প্রশ্নটা আসে সেটা হলো কত পুঁজি বা মূলধনের প্রয়োজন? টি-শার্ট ব্যবসার ক্ষেত্রেও নিশ্চয় এমন প্রশ্ন মনে জেগেছে। তো চলুন বলি, আপনি যদি ছোটো পরিসরে শুরু করতে চান বা অনলাইনে টি-শার্ট বিজনেস করতে চান তাহলে আপনার বেশি মূলধন লাগবে না। মোটামুটি ১০০০০-১২০০০ টাকায় অনায়াসে এই ব্যবসা শুরু করে দিতে পারবেন। কিন্তু যদি অফলাইনে অর্থাৎ কোনো দোকান বা শো-রুম খুলতে চান তাহলে নিশ্চয় বুঝতে পারছেন যে আপনাকে আরও বেশি পুঁজি বিনিয়োগ করতে হবে। দোকান বা জায়গা, ট্রেড লাইসেন্স, দোকান বা শো-রুমের আসবাবপত্র সহ অন্যান্য সব কিছুর জন্য বেশ ভালোই অর্থের প্রয়োজন হবে। আর হ্যাঁ, আপনি যদি অনলাইনে টি-শার্ট বিজনেস শুরু করতে চান তাহলে চেষ্টা করবেন ট্রেড লাইসেন্স নিতে। তাহলে যে সুবিধা পাবেন তা হলো ব্যাংক থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ ঋণ নিতে গেলে কম ঝামেলা পোহাতে হবে এবং অনলাইন ট্রানজেকশন, যেমন: বিকাশ, নগদ, রকেটে মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন।

⏩ আরও পড়ুন: হারানো মোবাইল ফোন কীভাবে খুঁজে পাবেন?

টি-শার্ট ব্যবসার বাজার সম্ভাবনা কেমন?

আগেই বলেছি যে টি-শার্টের অধিকাংশ ক্রেতাই তরুণ সমাজ। যদি বর্তমান বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি হয় তাহলে গুগলের তথ্য মতে বাংলাদেশের তরুণ সমাজে (১৫-২৪ বছর বয়স) প্রায় সাড়ে ৩ কোটি মানুষ। যা মোট জনসংখ্যার শতকরা ২০ ভাগ। টি-শার্টের জন্য এই পরিমাণ নিশ্চিত ক্রেতা রয়েছে বাংলাদেশে। তাছাড়া অন্যান্য বয়সের মানুষের কাছেও টি-শার্টের চাহিদা প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই আলোচনাটুকু থেকে অন্তত বুঝতে পারছেন বাংলাদেশে কী পরিমাণ সম্ভাবনা রয়েছে টি-শার্ট বিজনেসের।

কয়টি উপায়ে টি-শার্ট ব্যবসা শুরু করা যায়?

টিশার্ট ব্যবসায় মূলত তিন ভাবে করা যায়।

  • মার্কেট বা গার্মেন্টস থেকে রেডিমেড টি-শার্ট কিনে এনে তা সরাসরি ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করা।
  • মার্কেট থেকে সলিড অর্থাৎ এক কালারের টি-শার্ট কিনে এনে তা প্রিন্টিং করে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করা।
  • থান কাপড় অর্থাৎ এক সাথে অনেক টি-শার্টের কাপড় কিনে এনে ফ্যাক্টরিতে টি-শার্ট তৈরি করে, প্রিন্ট করে, তা ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করা।

মূলত এই তিন উপায়ে আপনি আপনার টি-শার্ট ব্যবসা শুরু করতে পারেন। হোক অনলাইনে টি-শার্ট ব্যবসা অথবা সরাসরি দোকান বা শো-রুমে, আপনাকে এই তিন উপায়ের যেকোনো একটি অনুসরণ করতে হবে।

⏩ আরও পড়ুন: Vivo Y20G কি আসলেই গেমিং ফোন?

মার্কেট বা গার্মেন্টস থেকে রেডিমেড টি-শার্ট কিনে বিজনেস

আপনি যদি চান গার্মেন্টস বা মার্কেট থেকে প্রিন্টিং সহ রেডিমেড টি-শার্ট কিনে তা সরাসরি ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করবেন তাহলে এই উপায়গুলো অনুসরণ করতে পারেন। আপনার ক্রয়ের পরিমাণের ওপর নির্ভর করছে কোথা থেকে টি-শার্ট কেনা লাভজনক হবে আপনার জন্য, মার্কেট না সরাসরি গার্মেন্টস। আপনি যদি ৫০-৫০০ টি টি-শার্ট কিনে ব্যবসা শুরু করতে চান তাহলে আমি পরামর্শ দেবো মার্কেট থেকে টি-শার্ট কিনুন। আর যদি পরিমান ৫০০ এর ওপরে হয় তাহলে গার্মেন্টস থেকে টি-শার্ট কিনুন। এরজন্য একটু ঘাঁটাঘাঁটি করে দেখুন কোন গার্মেন্টস কম দামে ভালো মানের টি-শার্ট দিচ্ছে। আপনি এই রেডিমেড টি-শার্টগুলো শুধু প্যাকিং করেই ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে পারেন। এগুলোর মান তুলনামূলক অন্যগুলোর চেয়ে ভালো। গুলিস্তান, বঙ্গবাজার, টঙ্গী, গাজীপুর, মিরপুর থেকে টি-শার্ট কিনতে পারেন।

সলিড টি-শার্ট কিনে প্রিন্টিং করে বিক্রি করা

টি-শার্ট বিজনেস শুরু করার জন্য এটাও একটা ভালো উপায় হতে পারে যদি আপনি সবকিছু ঠিকঠাকভাবে চালিয়ে নিতে পারেন। এর জন্য আপনাকে প্রথমে সলিড কালারের টি-শার্ট কিনতে হবে। বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো টি-শার্টের মার্কেট হলো ঢাকার গুলিস্তান। এখানে টি-শার্টের পাশাপাশি অন্যান্য পণ্যও পাইকারি কিনতে পারবেন। গুলিস্তানে অনেকগুলো টি-শার্টের পাইকারি মার্কেট আছে তার মধ্যে অন্যতম হলো নগর প্লাজা, বরিশাল প্লাজা, সিদ্দিক প্লাজা, ট্রেড সেন্টার। তাছাড়া মিরপুর, টঙ্গীতেও ভালো মানের সলিড কাপড়ের টি-শার্ট পাওয়া যায়। এখানে ৪০-১০০ টাকা দরে বিভিন্ন মানের টি-শার্ট পেয়ে যাবেন।

[যদি এই লাইনে নতুন হয়ে থাকেন তবে পরামর্শ থাকবে অভিজ্ঞ কাউকে সাথে নিয়ে যাবেন।]

সলিড টি-শার্ট কেনা হয়ে গেলে এবার তাতে প্রিন্ট করার পালা। যেখানে সলিড টি-শার্টের পাইকারি বাজার আছে তার আশে-পাশেই দেখবেন বহু প্রিন্টিংয়ের দোকান আছে। নতুন নতুন কয়েকবার এভাবে প্রিন্টিংয়ের দোকান থেকে প্রিন্ট করিয়ে ব্যবসা করুন। তারপর কিছুটা অভিজ্ঞতা হলে একটা ভালো মানের প্রিন্টিং মেশিন কিনে ব্যবসা করুন। প্রিন্টিং করাতে ১০-৪০ টাকার মধ্যে হয়ে যাবে। মান অনুযায়ী দামের পার্থক্য হবে। প্রিন্টিং করানো হয়ে গেলে টি-শার্টগুলো ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত।

⏩ আরও পড়ুন: নতুন স্মার্টফোন কেনার সময় যে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখা জরুরি!

থান কাপড় কিনে টি-শার্ট বানিয়ে বিক্রি

এই উপায়ে সবচেয়ে বেশি জটিলতা সৃষ্টি হয়; তবে সর্বাধিক মুনাফাও কিন্তু এখানেই। তাছাড়া আপনার ইচ্ছেমতো মান দিতে পারবেন আপনার টি-শার্টের। নিচের উপায়গুলো অনুসরণ করে টি-শার্ট বানাতে পারবেন।

  • থান কাপড় কেনা
  • টি-শার্ট তৈরির কারখানায় যাওয়া
  • টি-শার্টের প্রিন্টিং করানো
  • টি-শার্ট সুইং করানো

টি-শার্ট বানানোর জন্য আপনাকে প্রথমেই টি-শার্টের কাপড় কিনতে হবে। চাহিদা অনুযায়ী মার্কেট বা ফ্যাক্টরি থেকে কাপড় কিনতে পারেন। এরপর টি-শার্ট বানানোর জন্য ফ্যাক্টরির খোঁজ করতে হবে যেখানে টি-শার্ট বানায়। ফ্যাক্টরিতে কথা বলে আপনার চাহিদা অনুয়ায়ী পরিমাণ বলে দর-দাম ঠিক করে নেবেন। টি-শার্ট তৈরি হয়ে গেলে তাতে এবার প্রিন্ট করাতে হবে। প্রিন্ট করানো হয়ে গেলে এবার আপনার টি-শার্টগুলো সুইং করাতে হবে। অর্থাৎ প্যাটার্ন অনুযায়ী টি-শার্ট সেলাই করতে হবে। সেলাই করা হয়ে গেলে এবার তা প্যাকেজিং করে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে দিতে পারবেন।

আপনার টি-শার্ট কেনা বা তৈরি হয়ে গেলে তা ক্রেতাদের কাছে কীভাবে বিক্রি করবেন

তো চলুন জেনে নিই— কীভাবে আপনার কাঙ্খিত ক্রেতাদের কাছে টি-শার্ট বিক্রি করবেন তার প্রক্রিয়া। আপনি যদি অনলাইনে টি-শার্ট ব্যবসা করতে চান তাহলে ফেসবুকে একটা পেজ খুলে শুরু করতে পারেন। দেশের বিশাল পরিমাণ জনসংখ্যা ফেসবুক ব্যবহার করে। প্রথম প্রথম কোনো অর্ডার পাবেন না! আপনাকে ফেসবুক পেজ এবং পোস্ট বুস্ট করতে হবে আপনার কাঙ্খিত ক্রেতাদের কাছে। তারপর থেকে ধীরে ধীরে আপনি অর্ডার পেতে শুরু করবেন।

⏩ আরও পড়ুন: ফেসবুক আইডি হ্যাক হওয়া থেকে বাঁচাবেন কীভাবে?


প্রিয় পাঠক, এই ছিল— অনলাইনে টি-শার্ট ব্যবসা শুরু করবেন কীভাবে; তার বিস্তারিত! একটা কথা মনে রাখবেন, পৃথিবীর কোনো ব্যবসাতে রাতারাতি সফলতা আসে না! তাই এই বিজনেসে সাকসেস পেতে হলেও আপনাকে দীর্ঘদিন লেগে থাকতে হবে, প্ল্যানিং অনুযায়ী কাজ করতে হবে! তবেই এক সময় গিয়ে সফলতার মুখ দেখতে পাবেন! আশা করি, আমাদের এই পোস্টটি আপনার ব্যবসার জার্নিতে সহায়ত হবে! কেউ কোনো কিছু না বুঝলে কিংবা কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন! আর পোস্টটা পরিচিত বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন! ধন্যবাদ!

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন:

মন্তব্য করুন: